জানেন কি করিনা কাপুরের এই ঈর্ষণীয় চেহারার পেছনে রয়েছে ঘিয়ের গুণ! না একদম মিথ্যে বলছি না তাঁর ডায়াটেশিয়ান নিজেই একথা জানিয়েছেন ! আমাদের প্রচলিত ধারণা ঘি খেলে বুঝি মেদ বেড়ে যায় হু হু করে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপনি যদি দুবেলা ঘি-ভাত খান তাহলে আপনার ওজন বাড়বে না। এখন যদিও অনেকেই মোটা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় এবং কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার চিন্তায় ঘি খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। তবু ঘিয়ের উপকারিতা অস্বীকার করা যায় না। আর ঘি বলতে এখানে অবশ্যই গাওয়া বা গব্য ঘৃতর কথা বলা হচ্ছে। গাওয়া ঘি শব্দটি এসেছে গব্য ঘৃত কথাটি থেকে। গরুর দুধ থেকে যে ঘি তৈরি হয় তাকেই গাওয়া ঘি বলা হয়। সাউথ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটির ফার্মাকোলজির স্বনামধন্য প্রফেসার চন্দ্ৰধর দ্বিবেদী ঘি নিয়ে একধিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন।তাতে দেখা গেছে , ঘি-এর স্ফুটনাঙ্ক খুব বেশি। ২৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত ঘি গরম করা যায়। অধিকাংশ তেলই এই তাপমাত্রায় গরম করলে ক্ষতিকারক হয়ে যায়। ঘি সহজে নষ্ট হয় না। প্রায় ১০০ বছর পর্যন্ত ঠিক থাকে ঘি। সুন্দর গন্ধ ও স্বাদ অথচ অধিকাংশ দুগ্ধজাত দ্রব্যের মতো ঘি থেকে অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ঘিয়ের মধ্যে থাকা মিডিয়াম চেন ফ্যাটি অ্যাসিড খুব এনার্জি বাড়ায়। অধিকাংশ অ্যাথলিট দৌড়নোর আগে ঘি খান। এর ফলে ওজনও কমে। সব সময় ফ্যাট ক্ষতিকর হয় না। প্রফেসর দ্বিবেদীর মতে , কিছু ফ্যাট আছে যার প্রয়োজন আমাদের শরীরের আছে। এগুলোকে বলা হয় ফ্রেন্ডলি ফ্যাট। আর গাওয়া ঘিয়ে এই জাতীয় ফ্যাট আছে। মাছের মধ্যে যেমন ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায় ঠিক তেমনই ঘিয়েও প্রচুর পরিমাণে এটি মজুত থাকে।এ ছাড়া এসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড অতিরিক্ত চর্বি ঝরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। টাফ ইউনিভার্সিটির কার্ডিওলজিস্ট প্রফেসর দারিউস মোজাফারিয়ানের মতে , যারা নিয়মিত ঘি খান তাঁদের হার্টের অসুখ কম হয় এবং তাঁদের কোলেস্টেরল বৃদ্ধিও কম হয়। আমরা অনেকেই মনে করি যে ঘি খেলে হার্টের ক্ষতি হয়। যারা হার্টের রোগী তাঁরা সেই ভয়েতেই ঘি খান না। এই ধারণা একদমই ভুল। কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড বা সিএলএ শুধু হার্টের জন্য ভাল তাই নয়, এটি বিভিন্ন রকমের কারডিও ভাস্কুলার রোগ থেকে হার্টকে রক্ষা করে। ঘিয়ের মধ্যে রয়েছে বাটাইরিক অ্যাসিড। এই অ্যাসিড হজম ক্ষমতা বাড়ায়। যেকোনো গুরুপাক খাবার ঘিয়ের সঙ্গে খেলে তা হজম হয় তাড়াতাড়ি। ভিটামিন এ ও ই থাকায় ঘি পুষ্টিগুণে ভরপুর। এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের অ্যান্টি-ভাইরাল গুণ রয়েছে। যা ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। ডেলিভারির পর নতুন মায়েদের ঘি খাওয়ানো হয় এই কারণেই।আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুয়ায়ী ঘি হল প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। নিয়মিত অল্প পরিমাণে ঘি একটু জলের সঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রাচীন ভারতে বৈদিক যুগে ব্রাহ্মণদের দুপুরের খাওয়া হত ভাত, গাওয়া ঘি, মধু আর তিল দিয়ে। তাই ঘি শুধু স্বাস্থ্যরক্ষা বা চুল ও ত্বকের যত্নের সঙ্গে জড়িত নয়, ঘি হল সুখ আর সমৃদ্ধির প্রতীক। ঋষি চার্বাক সেই কারণেই বলে গেছেন, ঘি খেতে হলে প্রয়োজনে ধার করবে তবুও ঘি খাওয়া ছাড়বে না!