মাড়ি থেকে রক্তপাত



 “দাঁত ব্রাশ করতে গেলে মাড়ি থেকে রক্ত আসে”, “সকালে ঘুম থেকে উঠে থুথু ফেললে তাতে রক্ত দেখা যায়”, “আপেল পেয়ারা কামড়ে খেতে গেলে দেখি তাতে রক্ত লেগে আছে”- মুখ ও দন্তচিকিৎসকদের কাছে রোগীকে অহরহই এমন অভিযোগ করতে দেখা যায়। আসুন জেনে নিই এমন সমস্যার সম্ভাব্য কিছু কারণ ও প্রতিরোধ।


মাড়ি থেকে রক্তপাতের সম্ভাব্য কারণসমূহ:
১) মাড়ির প্রদাহজনিত রোগ (gingivitis, periodontitis)- প্রধানতম কারণ।
২) শক্ত ব্রিসলের টুথব্রাশ ব্যবহার করা, বেশি জোরে চাপ/ঘষা দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা।
৩) ভুল পদ্ধতিতে ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করা।
৪) শরীরে হরমোনের তারতম্য, যেমন- বয়ঃসন্ধি, গর্ভাবস্থা।
৫) মুখে ত্রুটিপূর্ণ restoration(filling) বা prosthesis(artificial crown, bridge, denture) এর উপস্থিতি,
৬) রক্তের রোগ, যেমন- idiopathic thrombocytopaenic purpura, haemophilia, leukaemia.
৭) Scurvy.
৮) কিছু সুনির্দিষ্ট ঔষধ সেবন।
প্রধানতম কারণটি নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। Gingivitis একটি অত্যন্ত কমন সমস্যা। এতে দাঁতে dental plaque (হলদে সাদা পরত) ও calculus (পাথর) জমে থাকতে দেখা যায়। মাড়িতে প্রদাহ হয়ে মাড়ি লাল হয়ে যায়, ফুলে যায় এবং মাড়ি থেকে রক্ত বেরোয়, দাঁত শিরশির করে। মুখে দুর্গন্ধ এবং মাড়িতে হালকা ব্যথাও থাকতে পারে। এ পর্যায়ে অনেকেই ফার্মেসি থেকে নানারকম মাউথওয়াশ, ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট বা অ্যান্টিবায়োটিক কিনে এনে ব্যবহার করতে থাকেন।কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে, মাড়ি থেকে শুধু রক্ত পড়া সাময়িক বন্ধ করা নয়, বরং যে কারণে রক্ত পড়ছে, সেই কারণটার চিকিৎসা করানো উচিত। নইলে এই gingivitis ধীরে ধীরে periodontitis এর দিকে অগ্রসর হবে।
Periodontitis এ শিরশির অনুভূতি, মুখে দুর্গন্ধ আরও বাড়ে। দাঁত ও মাড়ির মধ্যবর্তী অংশে আরও বেশি calculus (পাথর) জমা হতে থাকে। ফলে মাড়ি দাঁত থেকে সরে গিয়ে আলগা হয়ে যায়। তখন মাড়ির এই ফাঁক দিয়ে খাবার ঢুকে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ধীরেধীরে দাঁতকে চোয়ালের সঙ্গে আটকে রাখে যে periodontal ligament, তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়; চোয়ালের হাড়েও ক্ষয় দেখা দিতে পারে! এতে দাঁত নড়বড়ে হয়ে যায়, নিজে থেকে দাঁত পড়েও যেতে পারে। এই Periodontitis রক্তনালীতে চর্বি জমা, হৃদরোগ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, গর্ভকালীন খিঁচুনি ও কম ওজনের শিশু জন্মদানেরও ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে বলে মনে করা হয়! অথচ gingivitis পর্যায়ে থাকতেই চিকিৎসা করিয়ে ফেললে periodontitis খুব সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল।
প্রতিরোধের উপায়:
১) প্রতিদিন সকালে নাশতা খাওয়ার পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে নরম ব্রিসলযুক্ত টুথব্রাশ দিয়ে, মৃদু চাপে, সঠিক পদ্ধতি মেনে দাঁত ব্রাশ করা।
২) দুই দাঁতের মধ্যবর্তী অংশে জমে থাকা ডেন্টাল প্লাক ও খাদ্যকণা দূর করার জন্যে সঠিক পদ্ধতিতে ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করা। টুথপিক, পিন বা এ জাতীয় কোনওকিছু নয়।
৩) দৈনন্দিন চাহিদামত ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া। আমলকী, আনারস, লেবু, কমলা, পেয়ারা, কাঁচামরিচ প্রভৃতিতে ভিটামিন সি রয়েছে।
৪) ধূমপান, পান-জর্দা, গুল বা যে কোনও তামাকজাতীয় পণ্য সেবন থেকে বিরত থাকা।
৫) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা
৬) অন্তত ৬ মাস পর পর একজন ন্যুনতম BDS ডিগ্রিধারী এবং BMDC কর্তৃক রেজিস্টার্ড মুখগহ্বর ও দন্ত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দাঁত ও মুখগহ্বরের চেক আপ করানো।
সুতরাং আপনার যদি মাড়ি থেকে রক্ত আসার সমস্যা থাকে, তাহলে দেরি না করে নিকটস্থ রেজিস্টার্ড ডেন্টাল সার্জনকে দেখান, পরামর্শ ও চিকিৎসা নিন, সুস্থ থাকুন। মনে রাখবেন, রোগ যত দ্রুত ধরা পড়ে, তা সেরে যাবার সম্ভাবনা তত বেশি থাকে। ক্ষয়ক্ষতি কম হয়, চিকিৎসার সময় ও খরচ- দুইয়েরই সাশ্রয় হয়।